বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী

বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও রাজ্যের রয়েছে এক একটি জাতীয় ফুল। যা সেই সমস্ত দেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে স্থান পায়। শুধু ফুল নয় ফুলের পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় পশু, জাতীয় পাখি, ফল, নদ-নদী, উদ্ভিদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি যখন বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের কথা বলা হয় তখন যে নামটি উঠে আসে তা হল শাপলা ফুল। ভারতবর্ষের জাতীয় ফুল যেমন পদ্মফুল তেমনি বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা ফুল। এই দুই দেশের জাতীয় ফুলের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। দুটি ফুলই জলজ ফুল। অর্থাৎ পদ্ম ও শাপলা দুটি উদ্ভিদ জলজ উদ্ভিদ। আর এই ফুল দুটি দেখতেও অনেকটাই এক।

সারা বাংলাদেশ জুড়ে নানা রকমের উদ্ভিদ জন্মায়। সবুজে ভরা বাংলাদেশে কত রকমই না রংবেরঙের ফুল ফোটে। তবে তাদের মধ্যে জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে শাপলা ফুল। কিন্তু শাপলা ফুলের মধ্যেও ভাগ রয়েছে। নানা রঙের শাপলা ফুল পাওয়া যায় বাংলাদেশে। কিন্তু তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সাদা রঙের শাপলা ফুলকেই জাতীয় প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

  • IMG 20211130 WA0000
  • IMG 20211130 WA0002
  • বাংলাদেশের জাতীয় ফুল

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী?

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হল শাপলা। এটি জলজ উদ্ভিদ। সারা বাংলাদেশেই এই ফুল গাছ পাওয়া যায়। নানা রঙের শাপলার মধ্যে শুধুমাত্র সাদা শাপলা দেশের জাতীয় প্রতীক ফুল হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই কেন এই সাদা রঙের শাপলা ফুলকেই দেশের জাতীয় ফুল হিসাবে ধরা হয়। এর আসল কারণটি হলো, – বিশ্বাস করা হয় যে সাদা রং মন ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আর যেমন ফুলটি তার সমস্ত পাপড়িকে একত্রিত করে রাখে ঠিক তেমনই সমস্ত দেশের মানুষ দেশের একসূত্রে গাঁথা থাকে। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের সমস্ত জনগণের প্রতিক। সেই কারণেই সমস্ত রং এর শাপলার মধ্যে সাদা রঙটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার বিবরণ –

বাংলাদেশ খাল-বিল, নদ-নদী, ডোবা, পুকুর ইত্যাদির অভাব নেই। তাই বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের প্রায় সর্বত্রই শাপলা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। শাপলা জলজ উদ্ভিদ। শাপলার কান্ড বা ডাটি জলের মধ্যে থাকে এবং এর মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। শুধুমাত্র শাপলার পাতা এবং ফুল জলের উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। মূল থেকে একাধিক কান্ড বা ডগা বের হয়। এর পাতাগুলি গোলাকৃতির এবং সবুজ রঙের হয়। পাতাগুলি ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার বাইরের অংশগুলো ধারালো হয়ে থাকে। শাপলা ফুলে ১০ থেকে ১৫ টা পাপড়ি হয় ফুলগুলি দেখতে কিছুটা জলে ভাসমান তারার মত লাগে। ফুলগুলো প্রায় পাঁচ ছয় দিন জলের ওপর ভেসে থাকে।

শাপলা ফুলের অন্যান্য নাম ও প্রকারভেদ –

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল অর্থাৎ শাপলার ইংরেজি নাম (Water lily) ওয়াটার লিলি, অথবা (White water lily) হোয়াইট ওয়াটার লিলি। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শাপলাকে (White lotus) হোয়াইট লোটাসও বলা হয়। বাংলাদেশের শাপলা ফুল কে শাপলার পাশাপাশি শালুকও বলা হয়। নানা রঙের শাপলা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। যার মধ্যে লাল রঙের শাপলাকে রক্ত কমল এবং নীল রঙের শাপলাকে নীলকমল বলা হয়। ভারতবর্ষে শাপলা ফুল কে জায়গা বিশেষে নানা নামে ডাকা হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গে- শাপলা, তামিলে- ভেলাম্বাল, আসামে- নাল ইত্যাদি। সংস্কৃত ভাষায় শাপলা ফুল কে কুমুদ বলা হয়। বিশ্বের নানা জায়গায় আরো অনেক প্রজাতির শাপলা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা

শাপলা ফুলের পুরাণের সাথে সম্পর্ক –

বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের সাথে কিছু পুরাণেরও যোগ রয়েছে। যেমন ভারতে হিন্দু দেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল লাগে। এই ফুল মনসা পূজায় ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয় শোনা যায় প্রাচীন গ্রিকদের জল দেবীকেও শাপলা ফুল দিয়ে উপাসনা করা হতো। নানা প্রাচীন ইতিহাস ও পুরানে শাপলার বর্ণনা পাওয়া যায়।

শাপলা ফুল কোন কোন দেশে পাওয়া যায় –

বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল শাপলা। তবে সাদা রঙের বদলে শ্রীলঙ্কায় নীল শাপলা কে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই নীল শাপলাকে বাংলায় নীলকমল এবং ইংরেজিতে ব্লু লোটাস বলা হয়। এই ফুল বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় সীমাবদ্ধ নয়, এর পাশাপাশি ভারতেও অনেক জায়গায় শাপলা চাষ হয়ে থাকে। শাপলা চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া তথা এশিয়ার অধিকাংশ স্থানেই দেখতে পাওয়া যায়।

শাপলা ফুল ফোটার সময়কাল –

এই জলজ উদ্ভিদ বাংলাদেশে সারাবছরই দেখা যায়। বছরের সব সময় চাষ করা গেলেও মূলত এটি বর্ষাকালের ফুল। বর্ষা এবং শরতকালে শাপলার প্রাচুর্য দেখা যায়। ভারত ও বাংলাদেশের নানা ডোবা ও পুকুরে সারা বছরই কমবেশি শাপলা গাছ দেখা গেলও বর্ষার সময় এর অধিকাংশ চাষ করা হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল

শাপলা ফুলের ব্যবহার ও উপকারিতা –

ভারত-বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে এই শাপলার কান্ড বা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এর বিশেষ গুণ রয়েছে। কান্ড ছাড়াও এর যে মূল অর্থাৎ কন্দ সেটিকেও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। শাপলা ফুলের বীজ থেকে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও একরকম খই ভাজা হয় এটিকে ‘ঢ্যাপের খই’ বলা হয়। শাপলা থেকে নানারকম ভেষজ ওষুধ তৈরি করা হয়। শাপলায় রয়েছে নানা খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন। এই উদ্ভিদ ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী সবজি। গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে এটি একটি সুস্বাদু খাবার। ঔষধ এবং খাবার পাশাপাশি এই ফুল বাগান এবং পুকুর সাজাতেও কাজে লাগে। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় বাগান সাজাতে ছোট জলাশয় করে এই ফুল গাছ লাগানো হয়। জলে ভাসমান শাপলার পাতা এবং তারার মতো ফুল দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে। বেশ সুন্দর দেখতে এই শাপলা ফুল।

তাই সবদিক থেকে বিচার করে বলা যায় সত্যিই এই শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হওয়ার যোগ্য। রূপে-গুণে সমৃদ্ধ শাপলা ফুলের জলছাপ তাই বাংলাদেশের টাকা ও দলিল পত্র থাকে।

আরো পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজ্যে ফুল কি
আরো পড়ুন- বাংলাদেশের জেলা কয়টি 2023

“বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী”-এ 1-টি মন্তব্য

Leave a Reply