তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস। কিভাবে ও কত দিন ধরে নির্মাণ করা হয় তাজমহল

তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস। কিভাবে ও কত দিন ধরে নির্মাণ করা হয় তাজমহল

তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্থানে মানুষের সৃষ্টি কিছু স্থাপত্য সবাইকে বিস্মৃত করে। এমনই আশ্চর্য স্থাপত্যের সংখ্যা খুবই সীমিত যার মধ্যে ভারতের তাজমহল অন্যতম একটি। তাজমহল সম্পর্কে সকলেই জানি। কিন্তু কিভাবে তৈরি তাজমহল? এমনই কিছু অজানা তথ্য নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

মোগল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় স্ত্রীর স্মরণে ১৬৩২ থেকে ১৬৪৮ সালের মধ্যে আগ্রায় মূল্যবান সাদা মার্বেল দ্বারা একটি বিশাল সমাধি স্তম্ভ নির্মাণ করেন। যা সকলের কাছে তাজমহল নামে পরিচিত। এটি ভারতের মুসলিম শিল্পের অন্যতম নিদর্শন যা সারা বিশ্বের সর্বত্র প্রশংসিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের আগ্রা জেলার বিস্তীর্ণ প্রায় ১৭ হেক্টর জায়গাজুড়ে মোগল সাম্রাজ্যের উদ্যানে তাজমহল নির্মাণ করা হয়। যারা পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে যমুনা নদী। সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করেন। ১৬৩২ সালে এটি নির্মাণ শুরু হয়; মসজিদ ও দক্ষিণে মূল প্রবেশদ্বার বাইরের উদ্যান যুক্ত করে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় দীর্ঘ ২১ বছর পর  অর্থাৎ ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

আরও পড়ুন- প্রাচীনকালে নির্মিত বিশ্বের ৫ টি বিখ্যাত প্রাচীর যা আজও আশ্চর্যের

আরও পড়ুন- মোনালিসা ছবির রহস্য,ইতিহাস|Monalisa painting history in bengali

তাজমহল নির্মাণের ইতিহাস

তাজমহল নির্মানের জন্য রাজমিস্ত্রি, চিত্রশিল্পী, গম্বুজ নির্মাণকারী, হস্তশিল্পী, পাথরকাটা লোকেদেরকে ও অন্যান্য কারিগরদের কে আনা হয় পুরো সাম্রাজ্য এবং মধ্য এশিয়া ও ইরান থেকে। ওস্তাদ আহমেদ লাহোরি তাজমহলের সমস্ত কারিগর দের মধ্যে মূল স্থপতি ছিলেন।

ইন্দো ইসলামিক স্থাপত্য গুলির মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ স্থাপত্য হলো তাজমহল। তাজমহল নির্মাণ এতটাই নিখুঁত ও সৌন্দর্যময় যা সকল স্থাপত্য থেকে এটিকে আলাদা করে। তাজমহলের উত্তল অবতল হালকা আলো ছায়া ছন্দ বদ্ধ সংমিশ্রণ রয়েছে। এর চারিদিক অবস্থিত খিলান ও গম্বুজ গুলো এর সৌন্দর্য কে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

তাজমহল নির্মাণ নির্মাণকারীদের কাছে ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাজমহল তৈরি করার সময় বাঁশ এর ভাড়া না বেঁধে নির্মাণকারীরা ইটের ভাড়া বাধার নিয়মের মহলের ভিতরে ও বাইরে একইভাবে ইটের ভাড়া তৈরি করেছিলেন। ভাড়া বাধার কাজটি ছিল খুবই জটিল। নির্মাণ শেষে ভাড়া খুলতেই নির্মাণকারীদের সময় লেগেছে প্রায় ১ বছর।শাহজাহানের নির্দেশ ছিল যে কেউ ভারার ইট নিয়ে যেতে পারবে, যার জন্য সমস্ত ইট এক রাতের মধ্যেই সরিয়ে নিয়ে যান স্থানীয় কৃষক ও দিনমুজুরেরা।

তাজমহল নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় মার্বেল পাথর ও অন্যান্য মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঢালু পথ নির্মাণ করা হয়। সমসাময়িক তথ্য অনুযায়ী পাথর বহনের জন্য এক বিশেষ ধরনের গরুর গাড়ির সাথে ২০-৩০টি ষাঁড় বেঁধে দেওয়া হতো। পাথর উঠানোর জন্যে ব্যাবহার করা হতো কপিকল এর। তাজমহলের ভিত ও সমাধি নির্মাণ করতে প্রায় ১২ বছর সময় লাগে এবং বাকি সম্পূর্ণ কাজ করতে আরো ১০ বছর সময় লাগে।

বর্তমানে বিভিন্ন কারখানা ও বড়ো বড়ো শিল্প গড়ে ওঠার কারণে তাজমহলের সৌন্দর্য পূর্বের তুলনায় মলিন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উদ্যোগে তাজমহলে রক্ষণাবেক্ষণ চলার কারণে এই আশ্চর্য স্থাপত্যকর্ম আজও নিজের সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বমহিমায়।

Previous articleস্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা
Next articleবিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির 2023
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

2 COMMENTS

Leave a Reply