Bermuda Triangle in Bengali: বহু বছর ধরে মানুষের মনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা এসেছে। এটি এমন একটি স্থান যেখান দিয়ে কোন সামুদ্রিক জাহাজ উড়োজাহাজ বা বিমান গেলে অনেক ক্ষেত্রে তা হারিয়ে যায় এবং তার কোন সামান্য অস্তিত্বও থাকে না। কি হয় সেখানে তা নিয়ে চলেছে অনেক গবেষণা ও আলোচনা। কিন্তু আজও তা এক ধাঁধা হয়ে রয়ে গিয়েছে দুনিয়ার কাছে। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় হারিয়ে গেছে অনেক মানুষ, বিমান এবং জাহাজ তাই অনেক ক্ষেত্রে এলাকাটিকে শয়তানের ত্রিভূজ বলা হয়ে থাকে। আর এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে ঘিরে মানুষের মনে জমেছে নানা রহস্য। সমুদ্রের বুকে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোন লিখিত মানচিত্র গত এলাকা নয়। পৃথিবীর কোন মানচিত্রের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামের কোন স্থান উল্লেখিত নেই। এটা কল্পনার দ্বারা তিনটি স্থানকে ত্রিভুজ আকারে মান্যতা দেয়া হয়। ত্রিভুজের তিনটি কোণ দ্বারা যে তিনটি স্থানকে দেখানো হয় তা হলো- প্রথম কোন ‘ফ্লোরিডার মিয়ামি‘, দ্বিতীয় কোন ‘সানজুয়ান পুয়ের্তো রিকো‘, এবং এর তৃতীয় কোন হল ‘বারমুডা‘। আর এই ত্রিভুজ এলাকাটি আনুমানিক ৪ লক্ষ ৪০ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল জায়গাটি আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। আজ অবধি এই স্থানে হারিয়ে গেছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ। হারিয়ে গেছে প্রচুর জাহাজও। ১৯৪৫ সালে “ফ্লাইট 19” নামের একটি বিমান করে ফ্লোরিডার নেভির ১৪ জন এয়ারম্যান প্র্যাকটিস এর জন্য বের হন। অভ্যাস চলাকালীন তারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছে ছিলেন। হঠাৎই তাদের বিমানে গোলযোগ হতে শুরু করে এবং তারা সেটি কন্ট্রোল রুমে জানান। তাদের কম্পাসগুলোও দিক নির্দেশ এর কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চারদিকের পরিবেশ পাল্টাতে থাকে। তারা কিছুতেই পথ চিনতে পারে না। এরপর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই দিনই একটি বিমানে করে ফ্লাইট নাইনটিনকে খুঁজতে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই বিমানটি ও হারিয়ে যায়। প্রথমে ১৪ জন এবং পরে ১৩ জনের দল হারিয়ে যাবার পর সেই সময় সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক সার্চ অপারেশন চালানো হয় কিন্তু দুটো বিমানের কোন ধ্বংসাবশেষ বা যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
Read More, মোনালিসা ছবির রহস্য, ইতিহাস
Read More, পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা মানুষ
Bermuda Triangle in Bengali
যদিও ১৯৪৫ সালের পূর্বে এই অঞ্চলে এই ধরনের অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে যেরকম ১৯১৮ সালে USS Cuclops নামে একটি জাহাজ আমেরিকা তৈরি করে। এই জাহাজটি ছিল তৎকালীন সময়ের আমেরিকার সবচেয়ে বড় ও দ্রুততম জাহাজ। এই জাস্টি সেই সময় আমেরিকা থেকে ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল প্রায় ৩০০ জন যাত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সহ। কিন্তু হঠাৎই মাঝপথে জাহাজটি গায়েব হয়ে যায় জাহাজের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই স্থানটির নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল লেখেন আমেরিকার একজন লেখক ১৯৬৪ সালে তার ম্যাগাজিনে। সেখান থেকে ব্যাপারটা আরো সকলের চর্চার বিষয় হয়েছে। আজ পর্যন্ত অনেক বিমান হারিয়ে গেছে সেই স্থানে কিন্তু আজও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তাদের হদিস। তবে এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর চর্চা ও গবেষণা হলেও সর্বপ্রথম ১৪৯২ সালে এই ধরনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তিনি বলেছিলেন যখন তারা সেই স্থানটি দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাদের জাহাজের সদস্যরা হঠাৎ সমুদ্রে নানা আলো জ্বলতে দেখেন এবং সেই সময় তাদের কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
বারামুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের কারণ কি
এই অঞ্চলের রহস্যের উন্মোচন করতে গিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব সামনে এসেছে অনেকের মতে এই অঞ্চলে এলিয়ানদের বসতি রয়েছে, আবার কেউ মনে করেন এই অঞ্চলে কোন সামগ্রিক দায়িত্ব রয়েছে যে জাহাজ গুলিকে ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য যদি পর্যালোচনা করা যায় তবে দেখা যাবে অঞ্চলের কম্পাস কাজ করে না এরকম তথ্য বহু সামনে এসেছে। এই বিশ্লেষণের আগে বলে রাখি পৃথিবীর উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু আমরা কম্পাসে দেখতে পাই কিন্তু কম্পাস যেদিকে মেরুকে নির্দেশ করে ম্যাগনেটিক পল তার থেকে একটু দূরে হয়। এর উত্তর রূপের গবেষকরা বলেছেন এই অঞ্চল Agonic লাইনের অন্তর্গত। Agonic লাইন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এই Agonic লাইনের মধ্যে পড়ে ফলে এখানে কম্পাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য থিওরি বলে এই ট্রায়াঙ্গেল অঞ্চলের সমুদ্র গভীর নয় ফলে সমুদ্রের মাঝে বিভিন্ন জায়গায় মাটির স্তর অনেক কিছুতে ফলে হয়তো অতিতে বিভিন্ন জাহাজ এখানে এসে আটকে যেত। এছাড়া এই অঞ্চলে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব দেখা যায় ফলে বৈজ্ঞানিক মতে সমুদ্রের মধ্যে যদি কোন স্থানে মিথেন গ্যাস অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে তবে সেটি জলের ডেন্সিটি কমিয়ে দেয়। এর ফলে সমুদ্রের ওই স্থানে কোন বস্তু ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে না। এছাড়া এই অঞ্চলের বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ হারিকেন কবলিত অঞ্চল ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন উপরে উল্লেখিত কোন ঘটনাই এখনো পর্যন্ত এই বিমান বা জাহাজের গায়েব হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ রূপে বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি।
অনেক লেখকরাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। তবে তাদের লেখাতে অনেক অতিরঞ্জন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রচুর চলচ্চিত্রও রয়েছে এই বারমুডা ট্রাইঙ্গেল নিয়ে। প্রত্যেকের নিজস্ব ভাবনার ফসল রূপে দেখা গিয়েছে স্থানটিকে। তবে অনেকেই মনে করেন অন্যান্য সাধারণ স্থানের মতো সাধারন এই স্থানটি। কোন কোন ক্ষেত্রে একে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, একে ডেভিলস ট্রাইংগেলও বলা হয়। শুধু তাই নয় এই এলাকায় এলিয়েনরা আসে এমন অনেকে মনে করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গবেষকদের মত হলো এখানকার ভৌগলিক পরিবেশ অন্যান্য স্থানের থেকে একটু বেশিই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পন্ন। তাই ধ্বংস হয় সমস্ত বিমান ও জাহাজ। তবে এর কোন তথ্য সম্পূর্ণ নয়। তাই কল্পনাপ্রবণ মানুষের মনে স্থান পেয়ে চলেছে এই অদ্ভুত স্থানের নানা সম্ভব-অসম্ভব কল্পনা।
Read More, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায়
Read More, পৃথিবীর বয়স কত ২০২৩
এই ধরনের রহস্যময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্যের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।