একটি বিল্ডিংয়ে গোটা শহর বসবাস করে- বিশ্বের অদ্ভুত একটি শহর

বিশ্বের অদ্ভুত একটি শহর: কখনো কি শুনেছেন আস্ত একটা গোটা শহর একটিমাত্র বিল্ডিং-এ বসবাস করে। আজ এরকমই একটি শহর সম্পর্কে আলোচনা করব যেটি আমাদের পৃথিবীতেই অবস্থিত। আশা করি আজকের এই রোমাঞ্চকর নিবন্ধটি আপনাদের ভালো লাগবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে যার নাম হল আলাস্কা। এই অঞ্চলের একটি শহর রয়েছে যার নাম হুইটিয়ার। শহরটির সম্পূর্ণ জনসংখ্যা একটি মাত্র বিল্ডিং-এ বসবাস করে। শহরের দোকানপাট, বিদ্যালয়ে, পুলিশ স্টেশন, পৌরসভা, পোস্ট অফিস, হসপিটাল, খেলার মাঠ, বাজার সবকিছু ওই বহুতল বিল্ডিংয়ে রয়েছে। কিন্তু কেন এরকম এই শহরটি বাইরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও কেন শহরের লোকজন এবং সমস্ত কিছু একটি বিল্ডিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, আপনাদের মনে এই প্রশ্ন অবশ্যই এসেছে।

বিশ্বের অদ্ভুত একটি শহর

হুইটিয়ার বিল্ডিংটি তৈরি করা হয় কেন

হুইটিয়ার শহর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের অন্তর্গত একটি শহর। এই শহরে যে বিল্ডিং এর মধ্যে সমস্ত মানুষ বসবাস করে সেই টাওয়ারের নাম হলো ‘বেজিচ টাওয়ার’। অতীতে ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় এই বহু তলে আমেরিকার সামরিক বাহিনীর বাসস্থান ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ঠান্ডা লড়াই শেষ হওয়ার পর যখন সৈন্যরা অন্যত্র চলে যায় তখন থেকে এই বহুতলে সাধারণ মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। ম্যাপে দেখলে বুঝতে পারবেন আলাস্কা উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে। সারাবছর অত্যন্ত কঠিন আবহাওয়া, অর্থাৎ ঠান্ডার কারণে অঞ্চলটি বরফ দ্বারা ঢাকা থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে ওঠে, সেই কারণে এই হুইটিয়ার শহরের জনগণ একটি মাত্র বিল্ডিং-এ বসবাস করে এবং এটি তাদের সবচেয়ে সুবিধা জনক বাসস্থান হয়ে উঠেছে।

হুইটিয়ার শহর, যোগাযোগ স্থল

হুইটিয়ার বিল্ডিংটি তে যদি আপনি যেতে চান তবে একটি সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে যেতে হবে যেটি পাহাড় ভেদ করে গেছে। এই একটি মাত্র সুরঙ্গ শহরটির সাথে আলাস্কার যোগাযোগ স্থাপন করে। সুরঙ্গ টি রাতের বেলা বন্ধ থাকে, আপনি যদি বাইরে কোথাও যান তবে রাতের মধ্যে হুইটিয়ার শহরে ফিরে আসতে হবে না হলে আবার পরের দিন ঢোকার সুযোগ পাবেন। এই সুরঙ্গের মধ্যে রেললাইন পাতা রয়েছে এই রেল লাইনের উপর দিয়েই আপনাকে গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে। একবার ভাবুন এই সুরঙ্গটি যদি হঠাৎ কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় তবে আলাস্কার জনবহুল অঞ্চল থেকে শহরটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। শহরটির মধ্যে আপনি অনেক ছোট জাহাজ, বোট দেখতে পাবেন যেগুলি মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অনেক ছোট ছোট বাড়ি রয়েছে কিন্তু সেগুলিতে এই মাছ ধরার সামগ্রী সরঞ্জাম মজুদ করে রয়েছে কোন মানুষ থাকে না

হুইটিয়ার বেজিচ টাওয়ার: সম্পূর্ণ বিবরণ

আলাস্কার হুইটিয়ার শহরের এই বহুতলের নাম বেজিচ টাওয়ার। এই বহুতল টি বাইরে থেকে দেখে একটি বিল্ডিং মনে হলেও সম্পূর্ণ বিল্ডিং টি মোট তিনটি পৃথক বিল্ডিং দ্বারা নির্মিত। প্রত্যেকটি বিল্ডিং এর মাঝে ২০ সেন্টিমিটার গ্যাপ রয়েছে যেগুলি প্রধানত ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য তৈরি করা। ১৯৬০ এর দশকে আলাস্কায় আশা ভূমিকম্প থেকে এই বিল্ডিংটি রক্ষা পেয়ে যায় শুধুমাত্র বিল্ডিংয়ের গঠনগত পরিকাঠামোর জন্য। এই বহুতল উচ্চতায় ১৫ তালা সম্পন্ন, বহুতলে পর্যটকদের জন্য থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। এই বহুতলে প্রায় 300 জন মানুষ বসবাস করে, এখানকার ছেলেমেয়ে দের পড়াশোনার জন্য একটি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা এই বিল্ডিংয়ে থাকেন এবং সেই সমস্ত বাচ্চাদের সাহায্য করেন। স্কুলে যাওয়ার জন্য বাচ্চারা বিল্ডিং এর মধ্যে লিফট করে চলে যেতে পারবেন।

পর্যটকরা যদি এই বিল্ডিং এ যান তবে তাদের 700 থেকে 1200 ডলার ঘর ভাড়া দিয়ে থাকতে হতে পারে। তবে এই বাসস্থানে আপনি সব রকম সুবিধাই পেয়ে যাবেন। এই বিল্ডিং এর মধ্যে দুটি চার্চ রয়েছে যেখানে গিয়ে এখানকার লোকেরা ধর্মীয় প্রার্থনা করতে পারে। বিল্ডিং এর মধ্যেই খেলার মাঠ রয়েছে বাচ্চাদের জন্য কারণ বাইরে বরফের ঢেকে থাকার কারণে বিল্ডিং থেকে খুব কম মানুষ বাইরে বেরন। প্রশাসনিক পৌরসভা ও পুলিশ স্টেশন রয়েছে এই বিল্ডিংয়ে, এই বাড়িটির মধ্যেই রাস্তা রয়েছে ও লিফট ব্যবহার করে আপনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই যেতে পারবেন। বাজার, মুদিখানা ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনাকাটার জন্য বাড়িটির ভেতরে দোকান বাজার রয়েছে।

বর্তমানে প্রায় ৭০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এই বিল্ডিংটির, এই শহরের মানুষদের এই বাড়িটি একমাত্র ভরসার জায়গা। সেখানকার বাসিন্দারা আশা করেন এভাবেই বিল্ডিংটি চিরকাল থেকে যাবে এবং তাদের সমস্ত বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরার কাজ করে থাকেন। এই শহরের ও বলা যায় এই অঞ্চলে প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক জাহাজে করে এসে থাকেন। বিশেষত এখানকার বরফ আবৃত সমুদ্র দেখার জন্য।

আশাকরি আজকের এই নিবন্ধটি আপনাদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ তত্তরূপে আমরা প্রস্তাবিত করতে পেরেছি, বাংলা ভাষায় এই ধরনের আন্তর্জাতিক রোমাঞ্চকর নিবন্ধের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন